Riyadhul Zannah Travels
Hajj

তামাত্তু হজ পালনের নিয়ম

February 11, 2025
image

হজ তিন প্রকার। ১. ইফরাদ। ২. তামাত্তু। ৩. কিরান। হজের এই তিনটি প্রকারের মধ্যে তামাত্তু-হজ বেশির ভাগ বাংলাদেশি পালন করে থাকেন। এটিই বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য বেশি সহজ।

তামাত্তু হজ বলা হয়— মক্কায় গিয়ে প্রথমে শুধু ওমরার নিয়তে ইহরাম ধারণ করে ওমরার কাজ সমাপ্ত করা। এরপর মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়া। অতঃপর ওই সফরেই হজের নিয়তে মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে হজের সব আমল সম্পাদন করা।

তামাত্তু হজ পালনের নিয়ম 

হজের কার্যক্রম ৮ জিলহজ থেকে শুরু হয়। তাই তামাত্তু হজ পালনকারীদের ৮ জিলহজের আগেই তাদের ওমরা পালন করতে হবে।

মিনায় অবস্থান

তামাত্তু হজকারীদের ৮ জিলহজ হুদুদে হারামের যেকোনো স্থান থেকে তথা নিজ বাসা, ঘর, হারাম শরিফ থেকে হজের নিয়তে পুনরায় ইহরাম বেঁধে জোহরের আগে মিনায় পৌঁছতে হবে। ৮ তারিখ জোহর থেকে ৯ তারিখ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা সুন্নত।

আরাফায় অবস্থান

জিলহজের ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর মিনা থেকে আরাফার দিকে যাত্রা করবে। সেদিন সূর্য হেলার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। 

ওই দিন ঝামেলামুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে নিজ নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসর নামাজ নিজ নিজ সময়ে মুকিম হলে চার রাকাত এবং মুসাফির হলে দুই রাকাত করে আদায় করবে। তবে মসজিদে ‘নামিরার’ জামাতে পড়লে একসময়েও আদায় করা যাবে। 

মোট কথা, এখানে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে এক আজান ও দুই ইকামতে আদায় করতে হবে।স্মরণ রাখতে হবে যে আরাফার সঠিক সীমান্তে পৌঁছতে ভুল করলে হজ হবে না।


মুজদালিফায় অবস্থান

আরাফায় অবস্থান শেষে এ দিন সূর্যাস্তের পর মাগরিব না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হতে হবে। মাগরিবের ওয়াক্ত চলে গেলেও, রাত গভীর হলেও মুজদালিফায় পৌঁছার পরেই মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়তে হবে। 

কেননা মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশা এক আজান ও দুই ইকামতে একসঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। এখানে রাত যাপন করা সুন্নত এবং ১০ জিলহজ ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করতে হবে।

কেননা ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। তবে দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়া বৈধ।

মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ ও ঈদুল আজহার দিনের করণীয়

জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং মিনায় পৌঁছে শুধু বড় জামারায় (শয়তানকে) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। 

১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পর থেকে পরদিন সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এই কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। যদি এই সময়ের মধ্যে কঙ্কর নিক্ষেপ করা না হয়, তাহলে দম দিতে হবে। এটি সূর্যাস্তের আগে করতে পারলে ভালো।

দমে শোকর ও মাথা মুণ্ডন

১০ জিলহজ কঙ্কর মারার পরই দমে শোকর বা দমে তামাত্তু—যাকে হজের কোরবানি বলা হয়, নিশ্চিত পন্থায় তা আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানির পরেই মাথা মুণ্ডন করা ওয়াজিব। তবে চুল ছোটও করা যাবে। মনে রাখতে হবে, হাদি বা কোরবানির পশু অন্যকে দিয়ে জবাই করানো হলে জবাইয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

কোরবানির পর মাথা মুণ্ডানো বা ছাঁটানোর পর ইহরাম খুলে সব কিছুই স্বাভাবিকভাবে করতে পারবেন। এমনকি স্বাভাবিক কাপড় পরেও তাওয়াফে জিয়ারত করা যাবে। তবে তাওয়াফে জিয়ারতের আগে স্বামী-স্ত্রী মিলন বৈধ হবে না।

ধারাবাহিকতা...

কঙ্কর মারা, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ওয়াজিব। এর ব্যতিক্রম হলে ‘দম’ দিতে হবে।

তাওয়াফে জিয়ারত ও সায়ী

তাওয়াফে জিয়ারত বা হজের ফরজ তাওয়াফ করে সাফা-মারওয়া সায়ী করা ওয়াজিব। সম্ভব হলে সেই তাওয়াফ ১০ তারিখে করা ভালো। অন্যথায় ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আগেই আদায় করা ওয়াজিব। মাথা মুণ্ডানোর পরই এই তাওয়াফ করা সুন্নত। তবে কারণবশত এর আগেও বৈধ আছে। তাওয়াফে জিয়ারতের পর স্বামী-স্ত্রী মিলনও বৈধ হয়ে যায়।

১০ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করা সুন্নাত।

১১-১২ ও ১৩ জিলহজ করণীয়

১১ ও ১২ তারিখে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জামারায় উভয় দিন সাতটি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় তা শেষ করবে। সূর্য হেলার পর থেকে পরদিন সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এই কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। সূর্যাস্তের আগে সম্ভব হলে ভালো। 

আর ১৩ তারিখ সূর্য হেলার পর কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করা সুন্নত। তবে কেউ যদি ১২ তারিখে চলে আসতে চান, তাহলে ওই দিন সূর্য হেলার পর থেকে পরদিন সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় পাথর মেরে চলে আসতে পারবেন। 

কিন্তু যদি কেউ ১৩ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর মিনায় অবস্থান করেন, তাহলে তাঁর জন্য ১৩ তারিখও কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। অন্যথায় ‘দম’ দিতে হবে। ১২ তারিখের পর হজযাত্রী সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন।

বিদায়ী তাওয়াফ

মিনা থেকে মক্কায় এসে বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। বাংলাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়। এটি ওয়াজিব। তবে হজ শেষে যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে পরিণত হয়ে যায়।

১২ তারিখের পর হজযাত্রী সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন।